06 Oct 2024, 12:20 am

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩-২০৫০ সালের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন এজন্য মোট ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থান থেকে আমাদের এনএপি বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন থেকে অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে ৫০-৫০ বন্টনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যোগদান করে ‘গ্লোবাল হাব অন লোকাললি লেড অ্যাডাপটেশন’ খোলার ঘোষণা দিয়ে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন জিডিপির ৬ বা ৭ শতাংশ জলবায়ু অভিযোজনে ব্যয় করে এবং সম্প্রতি ২০২৩-২০৫০ সালের জন্য ন্যাপ চালু করেছে।
কপ ১৫-এর পর বাংলাদেশ তার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ২০০৯ সালে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই তহবিলটি জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন উভয় ক্ষেত্রেই এ পর্যন্ত ৮০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ন্যাপ আমাদের বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার আওতায় যে কাজ হচ্ছে তার পরিপূরক হবে। আমি প্যারিস চুক্তির চেতনায় এই প্রচেষ্টায় আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সরকারী এবং বেসরকারী খাত থেকে আমাদের অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানাই।’
‘একইসঙ্গে, আমরা সমস্ত প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলিকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের সুযোগ আরও বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানাই,’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে অবশ্যই বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার আজ চালু হওয়া স্থানীয় নেতৃত্বাধীন অভিযোজন বিষয়ে গ্লোবাল হাবকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরেকটি অফার পেয়ে আমরা আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়কে এই অঞ্চল এবং এর বাইরেও শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে বসবাস করে আসছে এবং বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য বিপদের বিরুদ্ধে একধরনের স্থিতিস্থাপকতা অর্জন করেছে। তারা প্রকৃতির পরিবর্তনশীল গতিপথের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে একটি জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনগণের টিকে থাকার সংগ্রামের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ১৯৭০ সালে ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের পর মানুষের অবর্ননীয় দুর্ভোগ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সেখানে ভয়াবহ দুর্যোগে লক্ষাধিক মানুষ মারা গিয়েছিল।
তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকরা উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় জনগণকে সাহায্য করতে এগিয়ে না আসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি তাদের অবহেলার প্রতিবাদ করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) নিজেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সহায়তায় কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু উপকূলীয় অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন শুরু করেছিলেন যা স্থানীয়ভাবে ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিত। তিনি গাছ লাগানোর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)ও চালু করেছিলেন। সিপিপি এখন ৭৬ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে গঠিত। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও জলবায়ু কর্মের পরিকল্পনা করার জন্য তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করছি।’
বাংলাদেশের স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং জলবায়ু অভিযোজন সমাধানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার সম্পদ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই সমাধানগুলোকে সমর্থন করে। এই সংমিশ্রণটি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন ব্যবস্থাগুলোর একটি পুল তৈরিতে আমাদের ভালভাবে কাজ করেছে।’
‘আমরা এখন মানুষ এবং গৃহপালিত পশুদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছি,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো সাধারণত প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে কাজ করে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি বছর বর্ষাকালে লক্ষাধিক চারা রোপণ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করা হচ্ছে। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ১০০টি ‘মুজিব কিল্লা’ স্থাপন করেছি।
আধুনিক প্রযুক্তি আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং গভীর সমুদ্রসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সতর্কবার্তা পৌঁছাতে সাহায্য করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ লবণাক্ত, খরা ও বন্যা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে। ভাসমান কৃষি এখন সবজি উৎপাদনের জন্য ব্যাপকভাবে চর্চা করা হচ্ছে। ‘জলবায়ু-স্মার্ট মৎস্য ও পশুপালনের জন্য অনেক উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে।’ কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আমরা খাদ্য উৎপাদন ও তাপ কমানোর জন্য ছাদে চাষাবাদকে উৎসাহিত করছি।

তিনি বলেন, দেশের পানি ব্যবস্থাপনার প্রচেষ্টাও নদীগুলির সাথে এর জনগণের বহু পুরনো সহাবস্থানের দ্বারা পরিচালিত হয়। সরকার নদীগুলোর নাব্যতা ও পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে ড্রেজিং শুরু করেছে।
উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের সহজলভ্যতার ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম সোলার হোম সিস্টেম থাকায় তারা সেচের উদ্দেশ্যে এবং গৃহস্থালির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রহণকে উৎসাহিত করছেন।
তিনি বলেন,‘আমাদের জনগন দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু প্রভাবের অভিযোজিত প্রতিক্রিয়া হিসাবে অভিবাসন ব্যবহার করে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের গতিশীলতা রোধ এবং পরিচালনা উভয়কেই আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।’এ লক্ষ্যে সরকারের ফ্ল্যাগশিপ আশ্রয়ণ কর্মসূচির আওতায় তারা গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য প্রায় ১০ লাখ আধা-পাকা দুর্যোগ-সহনশীল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বহুতল আবাসন প্রকল্পটি কক্সবাজারের খুরুশকুলে নির্মিত হচ্ছে। সেখানে ১৩৯টি বহুতল ভবনে ৫ হাজার জলবায়ু-শরণার্থী পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জিসিএ চেয়ারম্যান সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, জিসিএ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. প্যাট্রিক ভারকুইজেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 8888
  • Total Visits: 1126033
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
  • ২রা রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১২:২০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018